সরকারি কর্মীদের ছুটি সংক্রান্ত নিয়মাবলী (Leave Rules) এবং ছুটির আবেদনের (Leave of Absence application) পদ্ধতি নিয়ে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক পরিবর্তন এসেছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে রাজ্য সরকার এক নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, যা কর্মজীবী মহিলাদের জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। রাজ্য সরকারের নতুন বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, সরকারি এবং বেসরকারি ক্ষেত্রের মহিলা কর্মীরা এবার ঋতুস্রাবকালীন ছুটি পাবেন।
Government Employees Leave of absence Rules
ভারতে কর্মজীবী মহিলাদের ক্ষেত্রে ঋতুস্রাব একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হলেও, এই সময়কালে কর্মক্ষেত্রে উপস্থিত থাকা তাদের জন্য বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। দীর্ঘ সময় ধরে এই বিষয়ে সচেতনতা তৈরি হলেও, সরকারীভাবে ছুটির ব্যবস্থা না থাকায় অনেক মহিলাকেই অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়েছে।
তবে এবার ওড়িশা সরকার এই সমস্যা সমাধানের জন্য একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। রাজ্যের উপ-মুখ্যমন্ত্রী প্রভাতী পারিদা স্বাধীনতা দিবসের উদযাপন উপলক্ষে এই ঘোষণা করেছেন। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, এখন থেকে সরকারি এবং বেসরকারি ক্ষেত্রের মহিলা কর্মীরা ঋতুস্রাবের প্রথম অথবা দ্বিতীয় দিনে ছুটি নিতে পারবেন। এই নতুন নিয়মটি দ্রুত কার্যকর করা হবে, এবং এই সিদ্ধান্তটি লক্ষ লক্ষ কর্মজীবী মহিলার জন্য এক বিশাল স্বস্তির কারণ হবে।
ঋতুস্রাবকালীন ছুটি: কোথায় কোথায় প্রচলিত?
ওড়িশা হল ভারতবর্ষের তৃতীয় রাজ্য, যেখানে সরকারীভাবে ঋতুস্রাবকালীন ছুটি প্রবর্তিত হয়েছে। এর আগে, বিহার এবং কেরালায় এই ধরনের ছুটি প্রদানের নিয়ম চালু রয়েছে।
- বিহার: বিহারে ১৯৯২ সাল থেকে এই ছুটি প্রদানের নিয়ম চালু রয়েছে। এখানে সরকারি কর্মচারী মহিলারা ঋতুস্রাবের সময় ছুটি নেওয়ার অধিকার ভোগ করেন।
- কেরালা: কেরালায় ২০২২ সালে ঋতুস্রাবকালীন ছুটি চালু হয়। কেরালা সরকার মাতৃত্বকালীন ছুটির পাশাপাশি ঋতুস্রাবকালীন ছুটি প্রদানের জন্যও একটি সুনির্দিষ্ট নীতি গ্রহণ করেছে। এই নীতির আওতায় ১৮ বছরের বেশি বয়সী মহিলাদের জন্য ছুটির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ওড়িশা রাজ্যের এই নতুন পদক্ষেপটি নারী কর্মীদের জন্য স্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে, যা তাদের কাজের চাপ থেকে মুক্তি দিয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুরক্ষা প্রদান করবে। ঋতুস্রাবকালীন সময়ে অনেক মহিলাই শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন, ফলে কাজের প্রতি তাদের মনোযোগ এবং দক্ষতা কমে যায়। এই ছুটি মহিলাদেরকে প্রয়োজনীয় বিশ্রামের সুযোগ দেবে, যা তাদের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহায়ক হবে।
ঋতুস্রাবকালীন ছুটি: সমগ্র দেশে প্রচলনের প্রয়োজনীয়তা
ভারতে ঋতুস্রাবকালীন ছুটির বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা হলেও, তা সর্বত্র সমানভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। যদিও কয়েকটি রাজ্যে ইতিমধ্যেই এই ধরনের ছুটি চালু হয়েছে, তবুও কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে একটি সর্বভারতীয় নীতির প্রয়োজন ছিল।
২০২২ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে মেন্সট্রুয়াল হেলথ প্রোডাক্ট বিল পাসের প্রস্তাব করা হয়েছিল, যা সারা দেশের মহিলাদের জন্য ঋতুস্রাবকালীন ছুটি বাধ্যতামূলক করার উদ্দেশ্যে প্রণীত হয়েছিল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সেই বিল পাস হয়নি।
এর মধ্যে, সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে, মহিলাদের ঋতুস্রাব চলাকালীন ছুটি দেওয়ার জন্য একটি মডেল নীতি তৈরি করার।
ওড়িশা সরকারের এই ঘোষণা কার্যকর হওয়ার পর থেকে অন্যান্য রাজ্যগুলিও এই ধরনের নীতি প্রণয়নের দিকে মনোযোগ দিতে পারে। কর্মজীবী মহিলাদের জন্য এই ধরনের একটি নীতির প্রয়োজনীয়তা অনেক আগেই উপলব্ধি করা হয়েছে, তবে তা বাস্তবায়নের জন্য সরকারি উদ্যোগ খুব একটা দেখা যায়নি।
ঋতুস্রাবকালীন ছুটি নারী কর্মীদের স্বাস্থ্যের উন্নতি
এই নতুন নীতি শুধুমাত্র নারী কর্মীদের জন্যই একটি সুবিধা নয়, বরং তাদের স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ঋতুস্রাবের সময় অনেক মহিলাই পেটে ব্যথা, ক্লান্তি, মাথা ব্যথা এবং অন্যান্য শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হন, যা তাদের কর্মদক্ষতায় প্রভাব ফেলে। ঋতুস্রাবকালীন ছুটির কারণে তারা তাদের স্বাস্থ্যগত সমস্যাগুলির সঠিক যত্ন নিতে পারবেন এবং শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে সক্ষম হবেন।
ঋতুস্রাবকালীন সময়ে কাজের চাপ মুক্ত থাকার মাধ্যমে মহিলারা আরও বেশি দক্ষতার সঙ্গে তাদের কাজ সম্পন্ন করতে পারবেন, যা তাদের কর্মজীবনের জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এছাড়াও, এই ধরনের ছুটির ব্যবস্থা কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের সম্মান এবং সমান অধিকার প্রদানের একটি উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
অন্যান্য রাজ্যগুলির জন্য দৃষ্টান্ত
ওড়িশা সরকারের এই সিদ্ধান্ত দেশের অন্যান্য রাজ্যগুলির জন্য একটি দৃষ্টান্ত হতে পারে। কর্মজীবী মহিলাদের জন্য ঋতুস্রাবকালীন ছুটি প্রদানের মাধ্যমে তারা যে পরিমাণ মানসিক ও শারীরিক চাপ থেকে মুক্তি পাবেন, তা তাদের কর্মদক্ষতা বাড়াতে সহায়ক হবে। অন্যান্য রাজ্যগুলিও এই ধরনের নীতি গ্রহণের মাধ্যমে নারী কর্মীদের জন্য কর্মক্ষেত্রে একটি স্বাচ্ছন্দ্যময় পরিবেশ তৈরি করতে পারে।
Leave of Absence application
ওড়িশা সরকারের এই নতুন নীতি মহিলাদের কর্মক্ষেত্রে আরও বেশি স্বাচ্ছন্দ্য এবং স্বাস্থ্যের উন্নতির সুযোগ প্রদান করবে। ঋতুস্রাবকালীন ছুটির মাধ্যমে কর্মজীবী মহিলারা তাদের স্বাস্থ্যগত সমস্যার যত্ন নিতে সক্ষম হবেন, যা তাদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। অন্যান্য রাজ্যগুলিও এই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে মহিলাদের জন্য একটি সমান অধিকার ও সম্মানের পরিবেশ তৈরি করতে পারে। অন্যান্য তথ্য জানতে হোমপেইজ ভিজিট করুন।