বিশ্বকর্মা পূজা এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও মাহাত্ম্য
বিশ্বকর্মা পূজা হল হিন্দু ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব, যা শিল্পী, কারিগর, ইঞ্জিনিয়ার এবং নির্মাণকর্মীদের মধ্যে বিশিষ্টভাবে পালিত হয়। এই পূজার মূল উদ্দেশ্য হল ভগবান বিশ্বকর্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো, যিনি সৃষ্টির দেবতা এবং কারিগরি দক্ষতার অধিকারী। হিন্দু পুরাণ অনুসারে, ভগবান বিশ্বকর্মা পৃথিবী এবং মহাবিশ্বের সৃষ্টিতে অসাধারণ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি দেবতাদের বাসস্থান, অস্ত্র, যানবাহন এবং অন্যান্য কারিগরি উপাদানের সৃষ্টিকর্তা।
বিশ্বকর্মা পূজা (Viswakarma Puja) সম্পর্কে জানুন। ভগবান বিশ্বকর্মা কে, তাঁর সৃষ্টির ইতিহাস, পূজার মাহাত্ম্য এবং কেন এই পূজা পালিত হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ুন। বিশ্বকর্মা পূজা বিশেষ করে কর্মজীবনের সফলতা ও কল্যাণের জন্য পালিত হয়। ভক্তরা বিশ্বাস করে যে, এই দিনে ভগবান বিশ্বকর্মার আশীর্বাদ গ্রহণ করলে তাঁদের কর্মক্ষেত্রে সাফল্য, যন্ত্রপাতির সঠিক কার্যকারিতা এবং সামগ্রিক উন্নতি নিশ্চিত হয়।
ভগবান বিশ্বকর্মার পরিচয় ও অবদান
ভগবান বিশ্বকর্মা হলেন হিন্দু পুরাণের সৃষ্টিকর্তা ও মহাবিশ্বের প্রথম স্থপতি। তাঁর কিছু বিখ্যাত সৃষ্টির মধ্যে রয়েছে:
- দারকা নগরী: শ্রীকৃষ্ণের আবাসস্থান।
- ইন্দ্রপ্রস্থ: পাণ্ডবদের রাজধানী।
- লঙ্কা নগরী: রাবণের রাজধানী।
তিনি ব্রহ্মার মানস পুত্র এবং মহাবিশ্বের মূল কারিগর ও প্রকৌশলী হিসেবে বিবেচিত হন। হিন্দু ধর্মগ্রন্থে তাঁকে দেবতাদের অস্ত্র, যানবাহন এবং বাসস্থানের সৃষ্টিকর্তা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ঋগ্বেদের মতে, তিনি স্থাপত্যবিদ্যার প্রতিষ্ঠাতা এবং কারিগরি বিদ্যার গুরু।
বিশ্বকর্মা পূজার গুরুত্ব ও উদযাপন
বিশ্বকর্মা পূজা মূলত ভাদ্র মাসের শেষ দিনে পালিত হয়, যা পূর্ব ভারতে “ভাদ্র সংক্রান্তি” নামেও পরিচিত। তবে উত্তর ভারতে, দীপাবলির পরদিন এই পূজা উদযাপন করা হয়। ভগবান বিশ্বকর্মার পূজা বিশেষভাবে কর্মজীবনের সাফল্যের জন্য প্রার্থনা করা হয়। পূজার মাধ্যমে ভক্তরা তাদের যন্ত্র ও কারখানার সফলতা কামনা করে।
বিশ্বকর্মা পূজার মাহাত্ম্য নিম্নলিখিত কারণগুলির জন্য বিশিষ্ট:
- শিল্প ও কারিগরি দক্ষতার উন্নতি: এই পূজা কারিগর, শিল্পী এবং ইঞ্জিনিয়ারদের মধ্যে কারিগরি ও সৃজনশীলতার উন্নতির জন্য পালিত হয়।
- কর্মজীবনের সাফল্য: ভগবান বিশ্বকর্মার আশীর্বাদে ভক্তরা তাঁদের কর্মক্ষেত্রে সাফল্য ও উন্নতি লাভ করে।
- যন্ত্র ও হাতিয়ারের পূজা: শ্রমিকরা তাঁদের হাতিয়ারের পূজা করে, যা তাদের কাজের গুণগত মান বৃদ্ধি করে।
পূজার আচার ও রীতি
বিশ্বকর্মা পূজায় বেশ কিছু বিশেষ আচার ও রীতিনীতি পালন করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু রীতিনীতি হল:
- সকালের স্নান: ভক্তরা তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে স্নান করে পবিত্র হয়।
- কর্মস্থলে সাজসজ্জা: অফিস, কারখানা, দোকান এবং অন্যান্য কর্মক্ষেত্রে ফুল ও আমপাতা দিয়ে সাজানো হয়।
- বিশেষ পূজা অর্চনা: ভগবান বিশ্বকর্মার প্রতিমা স্থাপন করে পূজা করা হয়।
- হাতিয়ার পূজা: শ্রমিকরা তাঁদের যন্ত্র ও হাতিয়ারের পূজা করে এবং সেদিন কাজ থেকে বিরতি নেয়।
- খাদ্য বিতরণ: অনেকে অভাবী লোকদের জন্য খাদ্য বিতরণ করে।
ভগবান বিশ্বকর্মার বিশেষ ভূমিকা
ভগবান বিশ্বকর্মা পৃথিবী ও মহাবিশ্বের নির্মাণের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর কিছু বিখ্যাত সৃষ্টির মধ্যে রয়েছে:
- স্বর্গের বাসস্থান: দেবতাদের জন্য বিশেষ আবাস গড়ে তুলেছেন।
- ইন্দ্রের বজ্র অস্ত্র: ইন্দ্রের জন্য বজ্র নির্মাণ করেছেন।
- রামের সেতু: রামায়ণ অনুযায়ী, লঙ্কার দিকে যাওয়ার জন্য রামের সেতু নির্মাণে ভূমিকা পালন করেন।
- জগন্নাথের বিগ্রহ: ওড়িশার পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের বিগ্রহ বিশ্বকর্মা তৈরি করেন।
ভগবান বিশ্বকর্মার প্রসিদ্ধ নামসমূহ
ভগবান বিশ্বকর্মার আরও কয়েকটি বিশেষ নাম রয়েছে, যেগুলি তাঁর কারিগরি দক্ষতা এবং সৃষ্টির বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরে। তাঁর প্রধান নামগুলি হল:
- বাচস্পতি: বাকশক্তির অধিকারী।
- মনোজব: মন এবং কর্মের সমন্বয়ে সৃষ্টিকর্তা।
- বদান্য: দানের অধিকারী।
- কল্যাণকর্মা: কল্যাণকর কাজের অধিকারী।
- বিধাতা: সৃষ্টির নিয়ন্তা।
- ধাতা: মহাবিশ্বের প্রতিষ্ঠাতা।
মেট্রোর টিকিট কাটায় নয়া সুবিধা চালু পুজোর আগেই! দেখুন বিস্তারিত
পূজার দিন পালনের সময়সূচি
বিশ্বকর্মা পূজা বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময়ে পালিত হয়। সাধারণত ভাদ্র সংক্রান্তি উপলক্ষে এটি পালন করা হয়। তবে কিছু অঞ্চলে দীপাবলির পরদিন এই পূজা হয়। নিচের টেবিলে বিভিন্ন স্থানে পূজার দিন ও আচার সম্পর্কে তথ্য দেওয়া হল:
স্থান | পূজার দিন | পালিত আচার |
---|---|---|
পূর্ব ভারত | ভাদ্র সংক্রান্তি | কর্মক্ষেত্রে পূজা, যন্ত্র পূজা |
উত্তর ভারত | দীপাবলির পরদিন | যন্ত্র পূজা, কর্মক্ষেত্র সাজানো |
ভগবান বিশ্বকর্মা পূজার উপকারিতা
বিশ্বকর্মা পূজার মাধ্যমে ভক্তরা তাঁদের কর্মক্ষেত্রে সাফল্য লাভ করে এবং তাঁদের যন্ত্রপাতির মসৃণ কার্যকারিতা নিশ্চিত করে। এছাড়া, এই পূজা পালনের ফলে কর্মজীবনের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানও হয়। পূজার মাধ্যমে ভক্তরা তাঁদের দৈনন্দিন জীবনে শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে।
উপকারিতা | প্রভাব |
---|---|
কর্মক্ষেত্রে সাফল্য | যন্ত্রপাতির কার্যকারিতা বৃদ্ধি |
কর্মীদের মধ্যে ঐক্য বৃদ্ধি | কর্মজীবনে শান্তি ও উন্নতি |
শিল্প ও কারিগরি দক্ষতার উন্নতি | সৃজনশীলতা বৃদ্ধি ও কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি |
FAQs (প্রশ্নোত্তর)
প্রশ্ন ১: ভগবান বিশ্বকর্মা কে?
উত্তর: ভগবান বিশ্বকর্মা হলেন ভগবান ব্রহ্মার মানস পুত্র এবং মহাবিশ্বের প্রথম স্থপতি। তিনি দেবতাদের জন্য বিভিন্ন অস্ত্র, যানবাহন এবং বাসস্থান তৈরি করেছিলেন।
প্রশ্ন ২: কেন বিশ্বকর্মা পূজা পালন করা হয়?
উত্তর: বিশ্বকর্মা পূজা পালিত হয় কর্মজীবনে সফলতা, যন্ত্রের সঠিক কার্যকারিতা এবং কারিগরি দক্ষতার জন্য ভগবান বিশ্বকর্মার আশীর্বাদ কামনার উদ্দেশ্যে।
প্রশ্ন ৩: বিশ্বকর্মা পূজায় কোন কোন পেশার লোকেরা অংশগ্রহণ করে?
উত্তর: ইঞ্জিনিয়ার, কারিগর, শিল্পী, নির্মাণকর্মী এবং কারখানার কর্মীরা বিশ্বকর্মা পূজায় অংশগ্রহণ করে। তাঁরা তাঁদের কর্মক্ষেত্রে সফলতা কামনা করেন।
প্রশ্ন ৪: ভগবান বিশ্বকর্মা কোন কোন সৃষ্টিতে ভূমিকা পালন করেছিলেন?
উত্তর: ভগবান বিশ্বকর্মা দারকা নগরী, ইন্দ্রপ্রস্থ, লঙ্কা, স্বর্গ এবং জগন্নাথের বিগ্রহের সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
বিশ্বকর্মা পূজা ২০২৪ বাংলা তারিখ
তিথি (ভাদ্র শুক্লপক্ষ) চতুর্দশী সকাল ১১টা ৪ মিনিট ১৫ সেকেন্ড পর্যন্ত। ৩১ ভাদ্র, ১৭ সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার শ্রীশ্রী বিশ্বকর্মা পুজো। ১৬ সেপ্টেম্বর (২০২৪) ভারতীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা ৪৩ মিনিটে রবি (সূর্য) রাশি পরিবর্তন করে সিংহ রাশি হইতে কন্যা রাশিতে গমন করবে। বিশ্বকর্মাপুজো ২০২৪ তিথি- ৩১ ভাদ্র, ১৭ সেপ্টেম্বর পুজো হতে চলেছে বিশ্বকর্মার। সেদিন অমৃত যোগ দিবা ৭।৫২ গতে, ১০।১৬ মধ্যে, এবং ১২। ৪০ গতে ২। ১৬ মধ্যে, ৩।২ গতে, ৪।৪০ মধ্যে এবং রাত্রি ঘ ৬।১৬ মধ্যে ৮।৪০ গতে ১১।৬ মধ্যে, ১।২৭ গতে ৩।০৪ মধ্যে।