সম্প্রতি মায়ানমারের মধ্যভাগে একটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়েছে, যা আগামী কয়েকদিনের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে বেশ কিছু জেলায় ভারী বৃষ্টির (Heavy Rainfall) কারণ হতে পারে। এই ঘূর্ণাবর্ত পশ্চিম-উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে বাংলাদেশের উপকূলে পৌঁছাবে, যার প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টি হবে। পশ্চিমবঙ্গের আবহাওয়া দফতরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বেশ কিছু জেলায় ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
Heavy Rainfall: কোন কোন জেলায় বৃষ্টি হবে?
আবহাওয়া দফতর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণবঙ্গের নিম্নলিখিত জেলাগুলিতে আগামী দু’দিন ধরে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে:
- কলকাতা
- হাওড়া
- হুগলি
- উত্তর ২৪ পরগনা
- দক্ষিণ ২৪ পরগনা
- পূর্ব মেদিনীপুর
- পশ্চিম মেদিনীপুর
- ঝাড়গ্রাম
- পুরুলিয়া
- বাঁকুড়া
- পূর্ব বর্ধমান
- পশ্চিম বর্ধমান
- মুর্শিদাবাদ
- নদীয়া
- বীরভূম
এই সবকটি জেলায় আগামী দু’দিনের মধ্যে বৃষ্টির মাত্রা বাড়বে। কিছু এলাকায় বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টির সম্ভাবনাও রয়েছে।
দুই ২৪ পরগনা এবং পূর্ব বর্ধমানে বিশেষ সতর্কতা
দক্ষিণবঙ্গের অন্যান্য জেলার তুলনায় উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব বর্ধমান জেলায় বেশি বৃষ্টি হতে পারে। আলিপুর আবহাওয়া দফতর বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে এই তিনটি জেলার জন্য। এই জেলাগুলিতে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। শুক্রবারের দিন বিশেষ করে এই এলাকাগুলিতে সজাগ থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
শনিবারের বৃষ্টির পূর্বাভাস
শুক্রবারের পরেও বৃষ্টি থামার সম্ভাবনা কম। শনিবারও কিছু জেলায় ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। বিশেষ করে ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, এবং বীরভূম জেলায় বৃষ্টির পরিমাণ বেশি হতে পারে। এই জেলাগুলিতে বৃষ্টি হতে পারে অতি ভারী, যার ফলে কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতে পারে।
উত্তরবঙ্গে বৃষ্টির সম্ভাবনা
পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণাঞ্চল ছাড়াও উত্তরবঙ্গের কিছু জেলায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার জলপাইগুড়ি, উত্তর দিনাজপুর, এবং মালদহ জেলায় বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বুধবারের দিনেও ভারী বৃষ্টি হতে পারে জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, এবং মালদহে।
উত্তরবঙ্গের বৃষ্টি পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে নিম্নলিখিত জেলাগুলির জন্য:
- জলপাইগুড়ি
- কোচবিহার
- উত্তর দিনাজপুর
- দক্ষিণ দিনাজপুর
- মালদহ
এই জেলাগুলিতে বৃষ্টি হলেও, দক্ষিণবঙ্গের মতো এত ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। তবে বজ্রবিদ্যুৎ সহ মাঝারি বৃষ্টিপাত হতে পারে।
কলকাতার আবহাওয়া পরিস্থিতি
কলকাতায় ইতিমধ্যেই কিছু বৃষ্টিপাত শুরু হয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই কলকাতায় কয়েক পশলা বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি দেখা গিয়েছে। আবহাওয়া দফতর থেকে জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবার দিনের বাকি অংশেও কলকাতার আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকবে এবং হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। তবে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই।
দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে আগামী কয়েকদিন বৃষ্টির প্রবণতা বেশি থাকবে। তবে শনিবারের পর বৃষ্টি কিছুটা কমে আসতে পারে। যদিও এর ফলে কিছু এলাকায় বন্যা বা জলমগ্ন পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। বিশেষ করে নিম্নাঞ্চল বা নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলিতে জলাবদ্ধতার ঝুঁকি বেশি থাকবে। তাই এসব এলাকায় আগে থেকেই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
উত্তরবঙ্গে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমলেও বজ্রবিদ্যুৎ সহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকবে। তাই উত্তরবঙ্গের বাসিন্দাদেরও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
মায়ানমারের ঘূর্ণাবর্তের প্রভাব
মায়ানমারের মধ্যভাগে তৈরি হওয়া এই ঘূর্ণাবর্ত পশ্চিমবঙ্গের বৃষ্টি বৃদ্ধির মূল কারণ। এই ঘূর্ণাবর্তের প্রভাব আগামী কয়েকদিন ধরে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় টানা বৃষ্টি আনতে পারে। বিশেষ করে দুই ২৪ পরগনা এবং পূর্ব বর্ধমান জেলার জন্য ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, এবং বীরভূমের জেলাগুলিতে শনিবার ভারী বৃষ্টি হতে পারে। তাই এই এলাকার মানুষদের সতর্ক থাকতে হবে।
জলাবদ্ধতার সম্ভাবনা
দক্ষিণবঙ্গের কিছু এলাকায় বৃষ্টির ফলে জলাবদ্ধতার সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে যেসব এলাকা নদীর তীরবর্তী বা নিম্নাঞ্চল, সেখানে জলমগ্ন অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। তাই এই এলাকাগুলিতে আগে থেকেই প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, এবং পূর্ব বর্ধমান জেলার বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে হবে।
বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতার সম্ভাবনা থাকায় কিছু প্রস্তুতি নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিচে কিছু পরামর্শ দেওয়া হলো:
- বিদ্যুৎ: ভারী বৃষ্টির সময় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রাখতে হবে, বিশেষ করে যেসব এলাকায় পানি জমার সম্ভাবনা বেশি।
- খাদ্য ও পানি সংরক্ষণ: বাড়িতে শুকনো খাবার এবং বিশুদ্ধ পানির সংরক্ষণ করতে হবে।
- জরুরি নম্বর: স্থানীয় প্রশাসনের জরুরি সেবার নম্বর সংরক্ষণ করতে হবে।
- চিকিৎসা সরঞ্জাম: প্রয়োজনীয় ওষুধ ও প্রাথমিক চিকিৎসা সরঞ্জাম হাতে রাখতে হবে।
সার্বিক পরিস্থিতি
মায়ানমারে তৈরি হওয়া ঘূর্ণাবর্তের কারণে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টি বাড়তে পারে। তবে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে বৃষ্টির মাত্রা উত্তরবঙ্গের তুলনায় বেশি হবে। বিশেষ করে দুই ২৪ পরগনা এবং পূর্ব বর্ধমানে বৃষ্টির মাত্রা বাড়তে পারে। উত্তরবঙ্গেও কিছু এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হতে পারে।
আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, শনিবারের পর বৃষ্টি কিছুটা কমতে পারে। কিন্তু বৃষ্টির ফলে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। তাই সবাইকে আগাম সতর্কতা অবলম্বন করে প্রস্তুত থাকতে হবে।